অযোধ্যাকাণ্ড
চার ভাইয়ের বিয়ের পর রাজা দশরথ ভাবলেন, আমি এখন বৃদ্ধ, তাই রামকে রাজা করব।তিনি রামকে খুবই ভালোবাসতেন। শুধু দশরথইবা বলি কেন, রাজ্যের সকল মানুষই রামকে অত্যন্ত ভালোবাসত। সবাই চাইত রামই পরবর্তীতে রাজা হোক। কারণ তিনি ছিলেন সত্যবাদী, দয়ালু আর বুদ্ধিমান।
রাজ্যাভিষেকের আয়োজন:
রাম রাজা হবে, এ-খবরে অযোধ্যা জুড়ে আনন্দের ঢল নামল। সবাই রামের রাজ্যাভিষেকের অপেক্ষায়।
কিন্তু তখনই ঘটল অঘটন।
অনেকদিন আগে দশরথের মেজ রানি কৈকেয়ী তাঁর অসুস্থ স্বামীকে সেবা করেছিলেন। সেই সময় রাজা তাঁকে দুটি বর দিতে চেয়েছিলেন। রানি তখন বর দুটি নেননি, বলেছিলেন পরে সময়মতো চেয়ে নেবেন।
রাম রাজা হবে এমন ঘোষণা শুনে যখন রাজ্যের সকলেই যারপরনাই খুশি, আনন্দে মেতে উঠেছে, তখন রানি কৈকেয়ীর এক দাসী মন্থরা, সে বড়োই কুটিল আর খারাপ মনের মানুষ। সে রানির কাছে এসে কু-বুদ্ধি দিয়ে তাঁর মন বিষিয়ে দিল। বলল, তোমার ছেলে ভরত কেন রাজা হবে না? আর মনে করিয়ে দিল, এই সুযোগ, তুমি বর দুটি চেয়ে নাও, এক বরে রাম যাবে বনে আরেক বরে ভরত রাজা হবে।
কৈকেয়ীর মন নিমেষে বিষিয়ে উঠল। তিনি রাজার কাছে বর চাইলেন—
১. রামকে চোদ্দ বছর বনবাসে পাঠাতে হবে।
২. তাঁর ছেলে ভারতকে রাজা করতে হবে।
রাজা দশরথ দুঃখে ভেঙে পড়লেন, কিন্তু কথা দিয়েছিলেন বলেই কিছু করতে পারলেন না।
রামের বনযাত্রা:
রাম শান্তভাবে সব শুনলেন এবং বললেন, “পিতৃসত্য পালন করাই আমার ধর্ম।”
তিনি বনযাত্রায় রওনা দিলেন। লক্ষ্মণ ও সীতা–রামের ভাই ও স্ত্রী–তাঁর সঙ্গে গেলেন।
অযোধ্যার মানুষরা কাঁদতে লাগল। রাজা দশরথও দুঃখে দুঃখে মারা গেলেন।
ভরতের প্রতিজ্ঞা:
ভরত যখন সব জানলেন, তখন তিনি মামার বাড়িতে ছিলেন। বাড়ি ফিরে এসে তিনি দাদা রামকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাম বললেন, “আমি পিতার সত্যপালনের জন্য বনবাসে এসেছি।”
তখন ভরত রামের খড়ম (জুতো) নিয়ে এলেন এবং রাজসিংহাসনের ওপর রাখলেন। বললেন, “এই খড়মই অযোধ্যার রাজা, আমি শুধু রামের হয়ে রাজ্য চালাব।”
0 মন্তব্যসমূহ